একনজরে বান্দরবান



বান্দরবান, পর্যটকদের কাছে এক অসাধারণ ভ্রমণ স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান জেলার দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। বান্দরবান জেলার আয়তন ৪৪৭৯ বর্গ কিলোমিটার। রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ির মতই এখানে রাজা আছে।
বাংলাদেশের ভিতরে, বান্দরবানকে ঘিরে রয়েছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি আর অন্যদিকে মায়ানমারের আরাকান ও চিন প্রদেশের সীমান্ত।



বান্দরবানের ৭টি উপজেলা। এগুলো হচ্ছে-

১. আলিকদম
২. লা্মা
৩. বান্দরবান সদর
৪. থানচি
৫. নাইক্ষ্যংছড়ি
৬. রোয়াংছড়ি
৭. রুমা




এই জেলার অন্যতম নদী সাঙ্গু বা শঙ্খ। দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয় এমন একমাত্র নদী এটি। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে মাতামুহুরী ও বাঁকখালী।



বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর । আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে "ম্যাঅকছি ছড়া " হিসাবে । অর্থ্যাৎ মার্মা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ । কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে । বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবানের প্রকৃত নাম "রদ ক্যওচি ম্র"।





বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ। এই অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুণর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্বে আনে। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট্‌স বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিলো। ১৯৪৭ সালে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশের জেলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। আশির দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি জেলা- রাঙামাটি, বান্দরবান, ও খাগড়াছড়ি-তে বিভক্ত করা হয়।



বান্দরবান পার্বত্য জেলা দূর্গম পাহাড়ী এলাকা হলেও এটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বিধায় জাতীয় পর্যায়ে এ জেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত অশ্রেণীভূক্ত বনাঞ্চল মূল্যবান কাঠ ও বনজ সম্পদে পরিপূর্ণ। একই সংগে এ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সাংগু ও মাতমূহুরী নদী উৎপাদিত বনজ সম্পদ আহরণ ও বিপননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ জেলার উৎপাদিত প্রধান বনজ দ্রব্যের মধ্যে সেগুন, গামারী, গর্জন, শিল কড়ই, তৈলসুর ইত্যাদি মূল্যবান কাঠ ও বাঁশ প্রধান। কৃষিজ দ্রব্যের মধ্যে আনারস, কলা, পেঁপে, কমলা, লেবু ও আলু।


মনোরম নৈসর্গিক দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্মৃদ্ধ বান্দরবান পার্বত্য জেলা ঠিক যেন ছবির মত। দেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গসহ সর্বত্র সবুজ-শ্যামলিমা গিরিশ্রেনীর এক অপরূপ দৃশ্য এ জেলায়। ভারত ও মায়ানমার এ দুটি দেশের আর্ন্তজাতিক সীমানায় অবস্থিত দেশের সর্বাধিক সংখ্যক উপজাতির বসবাস সম্বলিত এ জেলা স্বকীয় বৈশিষ্ঠ্যে স্বাতন্ত্র্যমন্ডিত। বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মিত হলে এ জেলা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হতে পারে।


ভাষা ও সংস্কৃতি:
বাংলা (সরকারী)
মারমা
ম্রো
ত্রিপুরা
বম
লুসাই
চাকমা
তঞ্চঙ্গ্যা
চাক
খেয়াং
খুমী
পাংখুয়া


বান্দরবান যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে যাওয়া। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান বাসে যেতে সাধারণত ৬ঘন্টা - ১০ঘন্টা সময় লাগে। নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা অথবা গাড়ি ভাড়া করেও বান্দরবান যাওয়া সম্ভব। এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখানে থেকে বাসে করেও বান্দরবান যাওয়া যায়। এছাড়াও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার থেকেও বান্দরবান যাওয়া যায়।






সংগৃহিত- উইকিপিডিয়া








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা

পৃথিবীর রহস্যময় পাহাড়গুলো